মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬

ডোমারে ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু


নীলফামারীর ডোমারে অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র সুরমা বেগম (৩৫) নামের এক প্রসূতির সন্তান প্রসবে সিজার করতে গিয়ে তার মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত শুরু করেছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর ডোমারে অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র সুরমা বেগম (৩৫) নামের এক প্রসূতির সন্তান প্রসবে সিজার করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার হলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে নীলফামারী সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যার অফিসার মনিরুজ্জামান, ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হিরম্ব কুমার রায়কে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার দুপুরে আকস্মিক তদন্তে আসেন অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নীলফামারী সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, আমরা আকস্মিক ভাবে এসে দেখছি আসলে ক্লিনিকটির অনুমোদন আছে কিনা, বিভিন্ন বিষয় আইনসম্মত আছে কিনা। এক প্রসূতির সন্তান প্রসবে সিজার করতে গিয়ে মৃত্যুর ধামাচাপা দেওয়ার ঘটঁনাও তদন্ত করা হচ্ছে। প্রসূতির পরিবারের সঙ্গেও কথা বলা হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, নীলফামারী জেলার ডোমার বাসষ্টান্ড সংলগ্ন অনুমোদনহীন পালর্স হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের সাবেক পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ একরামুল হক। সরকারী চাকরি থাকা অবস্থায় তিনি এটি গড়ে তোলেন প্রায় দেড় বছর আগে। গত এক বছর হয় তিনি চাকরি হতে অবসরগ্রহণ করেন। ক্লিনিকটি পরিচালনার জন্য সরকারীভাবে অনুমতির প্রয়োজন থাকলেও তিনি এখনও সেটি পাননি। ফলে অবৈধভাবে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে কিছু প্রভাবশালীর ছত্র ছায়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত সুরমা বেগম ডোমার উপজেলার উত্তর ভোগডাবুড়ী মুক্তিরহাট গ্রামের নালু ইসলামের স্ত্রী। স্বামী নালু ইসলাম জানায়, আমি খুব গরীব মানুষ দিন আনি দিন খাই। গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে তাকে ডোমারের পার্লস ক্লিনিকে নিয়ে আসি। ক্লিনিকের ম্যানেজার আগে ভর্তি করাতে বলেন, না হলে ডাক্তার দেখবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। স্ত্রীর শারিরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তিনি স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করে দেন। ভর্তির পর একজন নার্স এসে রোগীকে দেখে এবং বলে ডাক্তার বাহিরে আছে। আমি ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলেছি আমাকে ওষুধ ও ইনজেকশন দিতে বলছে। এরপর ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়ার পরে ধীরে ধীরে স্ত্রী সুরমার পেটের ব্যাথা কমে যায়। এভাবে অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আর প্রসবের ব্যথা উঠে না।
তখন ডাক্তারকে বললে ডাক্তার বলে যে তোমার স্ত্রীর পেটের বাচ্চা পানি ছাড়া পরে আছে, তাই এখন সিজার করতে হবে। আমি নরমালে প্রসবের কথা বলি। কিন্তু ডাক্তার বলে তা সম্ভব নয়। পরদিন বুধবার পর্যন্ত সুরমার পেটে ব্যথা না থাকায় বাধ্য হয়ে সিজার করতে বলি। পরদিন সকাল ১০টায় আমার স্ত্রীকে অপারেশন রুমে নিয়ে যায় এবং ৪০ মিনিট পরে জানায়, আমার স্ত্রীর কন্যা সন্তান হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই একটি মেয়ে শিশু আমার কাছে এনে দেয়। কিন্তু এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও আমার স্ত্রীর সাথে আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয় না। বার বার স্ত্রীর অবস্থা জানতে চাইলে বলে, এখনও জ্ঞান ফেরেনি। ঘটনাটি আমার সন্দেহ হওয়ায় পার্লস হসপিটালের এক ডাক্তারকে অনেক হাতে পায়ে ধরার পর বলে, তোমার স্ত্রী সুরমা মারা গেছে। একথা শোনার পর আমি মাথা ঘুরে পরে যাই।
আমি সুস্থ হওয়ার পর ক্লিনিকের সবাই বলে, কান্নাকাটি করে লাভ নেই যা হওয়ার হয়ে গেছে, আমরা তো আর ইচ্ছে করে মারিনি। যে যাওয়ার চলে গেছে। এখন তোমাকে কোন খরচ দিতে হবে না আমরাই তোমার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি অসহায় মানুষ কার কাছে যাব তাই আর কিছু বলিনি। এরপর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের খরচেই গত বৃহস্পতিবার( ১০ নভেম্বর) দুপুরে স্ত্রী সুরমার লাশ ক্লিনিকের পিছনের দরজা দিয়ে বের করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে, এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ও এলাকার কতিপয় সুযোগ সন্ধানী প্রভাবশালী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করে দেয়। ফলে ওই অসহায় ব্যক্তি বাধ্য হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামে স্ত্রীর লাশ দাফন করতে বাধ্য হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্লস হসপিটাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ডাঃ একরামুল হক সাংবাদিকদের জানান, সুরমা বেগম সিজার করার সময় হার্ট ষ্টোকে মারা যায়।
এ ঘটনায় এলাকার সচেতন মহল ঘটনাটি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ডোমারের উক্ত ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলেছে।