অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ওই কিশোরীর বিচার করা হয়। এদিকে কিশোরীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম মনিরুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এস এম মনিরুল ইসলাম সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আত্মহত্যাকারী কিশোরীর নাম আফরোজা খাতুন (১৫)। সে সোনাবড়িয়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মাদের ছোট মেয়ে।
আফরোজার ভাই মামলার বাদী ইব্রাহীম খলিল জানান, তার বোন গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় সোনাবাড়িয়া বাজারে হাসানের দোকানে মোবাইলে ফ্লাক্সিলোড করতে যায়। সেখানে ওই দোকানের মধ্যে বিশ্রাম নিচ্ছিল কুষ্টিয়া থেকে বালি নিয়ে আসা (ঠিকানা অজ্ঞাত) ট্রাকচালক পলাশ। এ সময় দোকানদার হাসান নামাজ পড়তে পাশের মসজিদে চলে যায়। পরে সোনাবাড়িয়া গ্রামের বাবু সরদারের ছেলে হাফিজুর দোকানের সার্টার বন্ধ করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আফরোজা ও ট্রাকচালক পলাশ অনৈতিক কাজে লিপ্ত আছে-এ মর্মে প্রচার করে। এ খবর জানতে পেরে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম তার কয়েক অনুসারী ও ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার ইসমাইল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠায়। চৌকিদার ইসমাইল হোসেনসহ ৪/৫ জন ট্রাকচালক পলাশ ও কিশোরী আফরোজাকে দড়ি দিয়ে একত্রে বেধে গ্রাম ঘুরিয়ে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করে। ইউপি চেয়ারম্যান শত শত উৎসুক জনতার সামনে তাদের দুজনকে মারধর করে। এ সময় পলাশকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর আফরোজাকে সতর্ক করে তার মা আনোয়ারা বেগমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, বাড়ি ফিরে অফরোজা লোক লজ্জার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা ঘর থেকে বের হয়নি। আজ শনিবার বিকেলে সবার অজান্তে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আত্মহনন করে। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় খবর দেওয়া হয়।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সোনাবাড়িয়া গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে জিয়াউর ও আকরোম আলীর ছেলে রাজু জানান, তারা ওই দোনানের পার্শ্ববর্তী বাগানে আমগাছে স্প্রে করছিল। দুর থেকে দোকানের মধ্যে ট্রাকচালক পলাশ ও আফরোজাকে রেখে দোকানদার হাসান বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায়। পরে হাফিজুর ওই তালার উপর আরো একটি তালা লাগিয়ে লোকজন জড়ো করে তারা খারাপ কাজ করছে বলে প্রচার করে।
এ বিষয়ে মেয়েটির আনোয়ারা বেগম জানান, তার তিন সন্তান। আফরোজা সবার ছোট। ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের নির্দেশে চৌকিদার ইসমাইলসহ কয়েকজন তার মেয়েকে বিনা দোষে মারধর করেছে। অন্য একটি যুবকের সাথে দড়ি দিয়ে বেধে সোনাবাড়িয়া বাজারসহ গ্রাম ঘুরিয়েছে। শালিস বৈঠকে একাকি একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে কোন প্রকার অনৈতিক কাজ করেছে কিনা তার পরীক্ষার নামে পরিধেয় বস্ত্র খুলে শ্লীতাহানি ঘটানো হয়েছে। আমি দোষীদের বিচার চাই।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানান, ঘটনার দুই দিন পর মেয়েটির আত্মহত্যার খবর পেয়ে অপমৃত্যু মামলা করতে যান। পরে নেপথ্য ঘটনা জানতে পারেন। কিশোরীর ভাই গত শনিবার রাতে থানায় এসে মামলা দায়ের করে। রাত ১১টার দিকে আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ইসলামইল চৌকিদার ও জয়দেব দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আজ দুপুর ১টার দিকে এসটি সার্কেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জানান, অনৈকতার অভিযোগে তরুণ-তরুণীকে পরিষদে এনে তাদেরকে বেধে বাজারে ঘুরিয়েছেন চেয়ারম্যান। কিশোরী নির্যাতনের ওই ঘটনাটি আসামি জয়দেব দাস মোবাইলে ধারণ করে তার ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় তরুণীর ভাই বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- সোনাবড়িয়া গ্রামের ইসলামের ছেলে হাসান আলী (২৮) বাবু সরদারের ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৩০) চৌকিদার ইসমাইল হোসেন (৫৮) শওকত আলীর ছেলে হাকিম আলী (৫০) সাধন দাসের ছেলে জয়দেব দাস (২২) পলাশ (৩০) ঠিকান অজ্ঞাত।
সাতক্ষীরা আদালতের সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটার তামিম ইকবাল সোহাগ জানান, এ ঘটনায় আজ রবিবার অতিরিক্ত চিপ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক মহিবুল ইসলামের কাছে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের জামিন আবেদন করা হয়। বিচারিক হাকিম আগামী ১৫ ডিসেম্বর তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কলারোয়া উপজেলা চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করা হয়েছে।
আজ রবিবার দুপুর ৩টায় হেলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন।
এ সময় বক্তারা চেয়ারম্যানকে নির্দোষ উল্লেখ করে বলেন, চেয়ারম্যান মনিরুল তার এলাকায় মাসখানেক আগে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বানিজ্যের বিরুদ্ধে এক সমাবেশ করেন। সেই ঘটনার জের ধরে পুলিশের কথামতো বাদী মনিরুল চেয়ারম্যানকে এই মামলায় আসামি করেছে। তারা অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান।