ভয়েজ ডেস্ক:
মেয়েদের ১৮ ও ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিয়ে না দেওয়ার বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬-এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। তবে এতে বিশেষ প্রেক্ষাপটে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে মা-বাবার অনুমতিসাপেক্ষে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরও বিয়ে দেওয়া যাবে বলা হয়েছে। অবশ্য বিশেষ প্রেক্ষাপটে সর্বনিম্ন কত বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যাবে, অনুমোদন পাওয়া খসড়া আইনে তার কোনো উল্লেখ নেই। এমনকি কোন কোন প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে, তারও কোনো সংজ্ঞা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, এই ‘তবে’ যুক্ত বিশেষ বিধানের সুযোগ নিয়ে অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেবে।গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটির খসড়া অনুমোদন পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, নারীদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮-ই আছে। তবে এখানে একটি বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।
অনুমোদিত খসড়ায় বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে হলে তা অপরাধ। তবে বিশেষ কেইসের ক্ষেত্রে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
‘বিশেষ কেইস’-এর ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘কোনো অবিবাহিত মা কিন্তু তার বাচ্চা আছে—এ রকম কেইস যদি হয়, এসব ক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই বিধান করা হয়েছে। কত ধরনের সমস্যাই তো দেখা দেয়, সে জন্যই কম বয়সে বিয়েগুলো হয়ে যায়। এটাকে আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্যই এই প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে।
তবে কোন কোন প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে, তার সংজ্ঞা আইনে রাখা হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, এটা আদালত নির্ধারণ করবেন। বিশেষ প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রে কোনো বয়সও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
সচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে তো ১০-১১ বছরেও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। এ সমস্যাগুলো তো সমাজে আছে, এ ধরনের বিয়ের বৈধতার জন্য এটা একটা ব্যবস্থা।’
মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, বাল্যবিবাহ বন্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে আইনে। বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে বাল্যবিবাহ করলে তাদের ১৫ দিনের আটকাদেশ ও অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে বিয়ে করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। মা-বাবা আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করা যাবে।
বিয়ে পড়ানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আইন না মানলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট এগুলোর যেকোনো একটি বিয়ের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে। এ-সংক্রান্ত মামলার বিচার অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের মতোই হবে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতেও বিচার করা যাবে। যে অর্থদণ্ড আদায় হবে, তা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া যাবে। তবে বাল্যবিবাহ বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার শর্তে বাল্যবিবাহের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিধান অনুমোদিত খসড়ায় রাখা হয়েছে বলেও জানান শফিউল আলম।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৬’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভা আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ফেরত পাঠানোর কারণ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত একজন সচিব জানান, ‘এটা প্রকৃতপক্ষে ১৬ ধারার একটা ছোট আইন। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পরে ৭১ ধারায় অনেক বড় আইন হয়ে গেছে। এ জন্য মন্ত্রিসভা বলেছে, এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার, কারণ অনেক বড় পরিবর্তন হয়েছে।’