বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৬

‘মা আমারে পরীক্ষা দিতে দিলি না তুই’



এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বসার কথা ছিল মুক্তির। সংসারের অভাব মেটাতে পড়াশোনা ছেড়ে মাত্র এক মাস আগে ঢাকায় আসে। কাজ মেলে কারখানায়। বই-খাতা-কলম ছেড়ে মুক্তি বানাতে শুরু করে গ্যাস লাইটার। কারখানার অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ মুক্তি এখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাসপাতালে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঢুকতেই শোনা যায় মুক্তির চিৎকার। যন্ত্রণায় ছটফট করছে সে। মাকে বলছে, ‘মা, আমারে পরীক্ষা দিতে দিলি না তুই। আমারে তুই মাইরা ফেল। আমারে ঢাকায় কেন আনলি?’ অভাবী মায়ের কাছে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। বললেন, ‘মেয়ের এমন হইবো কে জানত, আফা? গরিব মানুষ আমরা; এহন চিকিৎসা করামু ক্যামনে?’ কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
গত মঙ্গলবার ঢাকার আশুলিয়ায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড নামের গ্যাস লাইটার প্রস্তুতকারী কারখানাটিতে আগুন লাগে। দগ্ধ হন ২৬ জন নারী ও শিশু। মুক্তি তাদেরই একজন।
মুক্তির মা লতা বেগম বাড়িতে বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। বাবা মো. উজ্জ্বল রিকশা চালান। আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানাটির পাশেই একটি ভাড়া বাসায় তাঁরা থাকেন।
মুক্তির মা বললেন, তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। অভাব মেটাতে বড় মেয়ে মুক্তি আক্তার ও স্বামীকে নিয়ে গত অক্টোবর মাসে ঢাকায় এসেছিলেন তাঁরা। ১ নভেম্বর থেকে কারখানাটিতে কাজ শুরু করে মুক্তি। ছোট দুই সন্তান বগুড়ায় নানির কাছে আছে।
মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে নির্বাক বসে আছেন বাবা মো. উজ্জ্বল। ঢাকায় রিকশা চালাতে এসেছিলেন। ভেবেছিলেন, মেয়েকে পরে পোশাক কারখানায় কাজে দেবেন।
হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, মুক্তির হাত, পা আর মাথার বেশ খানিকটা পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।