বার্ষিক ও সমাপনী পরীক্ষা আসন্ন। এই সময়ে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটায় বেশ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকদের।
সরেজমিন তালা উপজেলার গংঙ্গারামপুর, গোনালী, হরিচন্দ্রকাটি, কানাইদিয়া, খরাইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বসতভিটার পাশাপাশি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে আছে। গংঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পানিতে ডুবে থাকায় পার্শ্ববর্তী একটি ধানের চাতালে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা প্রতিভা রানী ঘোষ জানান, স্কুল মাঠে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এই স্কুলে ৯৫ জন ছাত্র/ছাত্রীর বিপরীতে তিনজন শিক্ষিকা রয়েছেন। তবে বছরের পর বছর জলাবদ্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এলাকার সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছেলে-মেয়েদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
১৪৮ নং গোনালী সরকারি বিদ্যালয়টি পানিবেষ্ঠিত একটি দ্বীপের মত দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয়ে ক্লাস করার মতো পরিস্থিতি না থাকায় পার্শ্ববর্তী রজব আলী গাজীর বাড়িতে পাঠদান দেয়া হচ্ছে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৮ জন ছাত্র-ছাত্রীকে। প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ মাস এমন অবস্থায় পাঠদান নেয়া হয় বিদ্যালয়টিতে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লতিফা খানম জানান, স্কুলটি পানিবন্দী থাকায় গত কয়েক মাস ধরে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভালো পরিবেশে ক্লাস নিতে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
এমন অবস্থা দেখা গেছে তালা টেকনিক্যাল কলেজ কক্ষেও। কলেজটির অধ্যক্ষ মো. হাফিজুল ইসলাম জানান, এখনও বেতন হয়নি শিক্ষকদের। তারপরেও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এগিয়ে নিতে অনেক টাকা ব্যয়ে ভবন ভাড়া করে ক্লাস চালাতে বাধ্য হচ্ছি।
হরিচন্দ্রকাটি, লাড়িপাড়া ও খরাইলসহ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষও ডুবে আছে পানিতে। আসা যাওয়ার পথে আছে হাটু পরিমাণ কাঁদা। তালা শহীদ কামেল মডেল হাইস্কুল, ভবানীপুর, কেসমতঘোনা, মাঝিয়াড়া, খানপুর, কাজীডাংগা, ইসলামকাটি এলাকার আরও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশ পানিবেষ্টিত থাকায় এখনও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসেনি। ফলে জলাবদ্ধতার কবলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা।
শিক্ষা অফিসের হিসাব মতে এ বছর কপোতাক্ষের উপচেপড়া পানিতে তালা উপজেলার ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং তিনটি কলেজ পানিবন্দী হওয়ায় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তালা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী হওয়ায় শিশুদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটেছে। তবে আমরা বিপদকালীন সময়ে অন্যত্র ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।