মাহতাব হোসেন
প্রচ্ছদ : ফারহান আশিকের আলোকচিত্র অবলম্বনে
সিহাবের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে আছি। সিহাবের বাসাটা যেন বাসা নয় একটা একটা রাজপ্রাসাদই বটে। বারিধারার এই বাসাটা খুব বেশিদিন হয়নি। এখনো রঙের কাঁচা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই সিহাবকে আমরা স্কুল জীবনে সিরাপ বলতাম। ক্লাসে সবার কাছে এই নামেই পরিচিত ছিল। কিভাবে সিহাব সিরাপ হলো তা আমি জানতাম না। হয়তো উচ্চারণের সুবিধার্থে, হয়তো ফাজলামো করে কেউ একজন রেখেছে।
ভরদুপুরে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে একটা লোকাল বাসে উঠতে যাচ্ছি এমন সময় পেছন থেকে নিজের নাম শুনে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বসুন্ধরার ভেতরের রাস্তার দিকে মুখ করে দাঁড় করানো একটা দামি ফিয়াটস গাড়ির জানালায় হাসিহাসি মুখ বের করে এক যুবক হাত ইশারায় ডাকছে।
'আমাকে কি ডাকছে?' চিন্তা করলাম একবার।
এবার গাড়ি থেকে নেমে দুই হাত ইশারা করে ডাকছে। আমার সামনে পেছনে কেউ নেই। জ্যাম ঠেলে সামনে এগিয়ে গেলাম। বেশ হ্যান্ডসাম যুবক, শরীরে দামি পারফিউম। যুবক অবাক করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে-
'কিরে গাঁধা আমাকে চিনতে পারিস নি?'
'হুম।'
'কে বলতো?'
'ছাড় আমার গা ঘামে ভিজে গেছে, তোর শার্ট নষ্ট হয়ে যাবে। তুই সিহাব।'
সিহাব আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে-
'গাঁধা প্রথমে আমাকে তুই যে চিনতে পারিস নি জানি। চল আমার বাসায় চল, এখানেই বাসা।
সিহাব এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে আসে এই বাসায়।
পরীর মতো রুপবতী এক মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।
'বলো তো কাজল এ কে? একটু হিন্টস দিই। এ আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। এবার বলো কে?'
'সমুদ্র ভাইয়া'
আমি পরীর মতো রূপবতী (!) মেয়ের মুখে আমার নাম শুনে যতটা না অবাক হয়েছি তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এই মেয়ের নাম কাজল এটা শুনে। সিহাব পরিচয় করিয়ে দেয় কাজলের সাথে। সিহাব বিয়ে করেছে এটা জানতাম না। আর সে যে স্কুলে আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল তাও না। তবে শাহেদ আর আমার সাথে সে মাঝে মাঝে মিশতো এতটুকুই। মোসাদ্দেক, রনি, বাবু, কমল, সাখাওয়াত কিংবা দিপাংশু -আমার গণ্ডি ছিল এরাই।
'দুপুরে এখানেই খেয়ে যেতে হবে। কাজল আয়োজন করছে।'
সিহাবের আদেশ। বড়লোক মানুষদের আদেশ সহজে ফেলে দেয়া যায় না। এদের আদেশ উপেক্ষা করা মানে অন্যায় করে ফেলা। অন্তত ঢাকায় এসে এটাই শিখেছি। ডমিনেটিং কালচারের ভাল চাষাবাদ কেন্দ্র। এখনও উপেক্ষা করার মতো সাহস আমি করে উঠতে পারিনি।
সিহাবের ড্রয়িংরুমটা চমৎকার। একদিকে পিকাসো ঠিক বিপরীত দিকে শাহাবুদ্দীনের একটা চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে। আমি আর সিহাব গল্প করছি। মাঝে মাঝে কাজল এসে টুকটাক কথা বলে যাচ্ছে। স্কুল জীবনের গল্প।
একবার সিহাব ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরীক্ষায় আমার সামনেই বসেছে। ফিজিক্স পরীক্ষা। বেচারা লিখতে না পেরে থরথর করে কাঁপছে। আমি জিজ্ঞেস করি-
'কি হয়েছে রে সিহাব, প্রশ্ন কমন পড়ে নি?'
সে কোনওমতে উত্তর দেয়-
'না'
'দে আমার কাছে তোর খাতাটা দে'
বলেই খাতাটা নিয়ে নিলাম।
আমার কাছে তার খাতাটা নিয়ে ঘষ ঘষ করে আঁধঘন্টা লিখে দিলাম। স্যার এসে সন্দেহ'র চোখে তাকাচ্ছিল। সিহাবের কাছে আমার খাতা। ধরা পড়লে নির্ঘাত দুজনেই বহিস্কার। শেষ স্যার ধরতে পারে নি। কিংবা মাথায় ঘামায় নি। আমাদেরই হয়তো মনের ভুল। সবার মতো সে পাশ করে গিয়েছিল।
সিহাব এখন অনেক বড়লোক হয়ে গেছে। এতোবড় বাসায় তারা দুটো প্রাণী আর একটা ছোট কাজের মেয়ে। গোটা এপার্টমেন্টটাই তাদের। বাকি ফ্ল্যাট গুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সিহাব আমাকে জিজ্ঞেস করে কি করছি আমি। বাসার খবর নেয়। তার ব্যবসা সম্পর্কে জানায়। কালিয়াকৈরে তার দুটো ফ্যাক্টরি। অফিস গুলশানে। তার বাবা মা আর বড়বোন থাকে ধানমন্ডিতে। বোনের স্বামী ইউএসএতে। প্রতিমাসে এক দুবার যাওয়া আসায় থাকে।
'তুই যেহেতু কিছুই করছিস না তাহলে আমার সাথে যোগ দে। তোর তো আত্মসম্মানবোধ বেশি'
আমার কি আত্মসম্মানবোধ বেশি? চিন্তা করে পারছি না। একবার সব বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার চলে গেল। আমি গেলাম না। মৃদুল টকা দিতে চাইল। আমি নিলাম না। এটা কি আত্মসম্মানবোধের বিষয়! এগুলো নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। তারপরেও বলি-
'অভাবের কাছে আবার আত্মসম্মানবোধ!'
'তাহলে তুই আমার কালিয়াকৈরের ফ্যাক্টরিটা দেখতে পারিস। চন্দ্রার কাছে আমাদের একটা রিসোর্টের মতো আছে। চাইলে ওখানে থাকতে পারিস। তুই চলে আসলে ভালোই হবে। আর তুই যদি এমপ্লয়ি হিসেব কাজ করতে চাস তোর যদি আত্মস্মমানবোধে লাগে তাহলে তুই পদবী অনুযায়ী বেতন তুলে নিবি।'
আমার জন্য এটা বলা যায় রাজার হাল। শাহজাহান রোডের একটা ঘুপচির মতো মেসে থাকি। মাস শেষে আমাকে খাওয়া-দাওয়াসহ তিন হাজার পাঁচশো টাকা দিতে হয়। তিনটা টিউশনি করি। ১০ হাজার টাকার মতো আসে। প্রতিমাসে সব স্টুডেন্ট-এর বাবা যে টাকা ঠিকমতো দেয় তাও না। বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাতে হয়। আম্মার জন্য আমাকে এটা নিয়ম করে যেতে হয়। আমি ভুলে যাই মা নিয়ম করে ৭ তারিখে ফোন দেবে। তার মধ্যে টিউশনির কোনো ভরসা নাই। মাঝে মধ্যে চলে যায় আবার আসে। তবে দুইটা ছাত্রীর বাবা-মা আমার ওপর অদ্ভুত কারণে সন্তুষ্ট। ভালো পড়াই কি না জানি না। টাকাও মাসের ৫ তারিখে ঠিকমতো পেয়ে যাই। গত দুইবছর থেকে পড়াচ্ছি। চাকরি পাওয়া আমার পক্ষে বুঝি আর সম্ভব না। চেষ্টা তো কম করি না। হয়তো এটাক্লে চেষ্টাও বলে না। খাচ্ছি, ঘুরছি ঘুমাচ্ছি। সেই অনুযায়ী সিহাবের চাকরির অফার আমার কাছে রীতিমতো স্বপ্নের মতো।
'আচ্ছা সিহাব আমি যদি তোর ফ্যাক্টরিতে জয়েন করি, তাহলে কত বেতন দিবি?'
'তোকে যে পদে আমি দিতে চাচ্ছি, সেই পদে প্রাথমিকভাবে বেতন পচাত্তর হাজার। গাড়ি, ড্রাইভার, তেল অফিসের।
সর্বনাশ এতটাকা দিয়ে কি করবো। আমার জীবন তছনছ করে দেবে সিহাব। মানুষের জীবনের সিঁড়িগুলোতে একটার পরে আরেকটায় ধাপ ফেলতে হয়। একসাথে দুইটা করে সিঁড়িও অতিক্রম করা যায়। তিনটা করেও লাফিয়ে লাফিয়ে অতিক্রম করা যায় কিন্তু একটু কষ্ট হয়। তাই বলে একসাথে একশো সিঁড়ি অতিক্রম করতে গেলে অতিক্রম করতে গেলে চিড়েচ্যাপ্টা হতে হবে। তবে এটাও ঠিক মানুষের জীবনে এক বা একাধিক মিরাকল আসে। সঠিক সময়ে সেই মিরাকল ক্যাচ না করলে পস্তাতে হয়।
কাজল এসে বসে। ধবধবে ফরসা একটি মেয়ে কালোপেড়ে শাড়ি। একেবারে খাঁটি বাঙালি মেয়ে। কপালে কালোটিপ।
'ভাইয়া আপনার কথা এতোবেশি শুনেছি যে আপনার একটা ছবি আমার মনের মধ্যে বসে গেছে। এ কারণেই হয়তো চিনতে পেরেছি।'
বিচিত্র কারণে এই মেয়ের মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে। পড়াশোনা করেছে সুইজারল্যান্ডের একটা ইউনিভার্সিটিতে। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। স্কুল জীবনের পরে মানুষের জীবনের বদলে যাওয়া সময়টাই সে বিদেশে কাটিয়েছে। গ্রাজুয়েশন লাইফটাই তো মানুষকে গড়ে তোলে। কে কোন ধরনের, কোন সংস্কৃতির মানুষ হবে সেটা নির্ভর করে এই গ্রাজুয়েশন লাইফ। অথচ এই মেয়ের মধ্যে কোনো পাশ্চাত্য কিংবা ইউরোপিয়ান ছাপ নেই। আর বিজনেস ফ্যাকাল্টির মেয়ে রীতিমতো বাঙালি ঘরনী।
আমি ঠোটের কোণে সামান্য হাসি আনি।
সিহাব বলে-
'কাজলের সাথে পরিচয় কিভাবে জানিস, আমি যাচ্ছিলাম রাশিয়ায়। বিমানে আমার পাশেই ওর সিট। ও আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়, মেঘ দেখে মুগ্ধ হয়। মানুষ এত মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় কিভাবে? আমার বিরক্তি লাগে। বিমানকর্মীরা ওয়াইন দিয়ে গেল। এই মেয়ে ছুঁয়েও দেখল না। আর আমি গলায় ঢেলে ঝিমুচ্ছি। একবার বুঝি ঘুম ঘুম ঝিমুনিতে ওর শরীরে পড়ে যেতে ধরেছিলাম। আমি তো অভ্যস্ত না। মস্কো এয়ারপোর্টে নেমে..
কাজল সিহাব কে থামিয়ে দিয়ে বলে-
'এই ছেলে পুরো জার্নিতেই আমাকে জ্বালিয়েছে। মস্কো এয়ারপোর্টে নেমেও কম জ্বালায় নি। লাউঞ্জের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাকে আব্বুর নিতে আসার কথা। আব্বু আমাকে নিতে আসতে দেরি করছিল। তাকিয়ে দেখি এই ছেলে অনবরত আমার চারপাশে ঘুরঘুর করছে...'
'না না আমি ওর কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে থেমে যাই। আমার নিজের কথা বাদ দিয়ে দুখী মেয়েটার জন্য মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে যাই। মায়াবশত দাঁড়িয়েছিলাম। আর একারণেই ওর বাবা পরে এসে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার ঠিকানা নিয়ে যায়। অবশ্য আমিও তাদের দেশের ঠিকানা নিই। এর মাসখানেক পরে দেশে এসে ও নিজেই টেলিফোন করে আমাকে।'
বাহ! বেশ সম্পর্ক কাজল-সিহাবের। দারুণ সুখের সংসার। সিহাব যে আমাদের সব বন্ধুদের ছাড়িয়ে এত দ্রুত ওপরে চলে যাবে। তা কি কেউ অনুমান করতে পেরেছে? আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছেলেটা মুকুল। ক্লাসে বরাবরই প্রথম হতো। ওর সাথে মাঝে মাঝে নিউ মার্কেটের ওখানে দেখা হয়। যখনই দেখা হয় বলে-
'দোস্ত কি খবর তোর, কিছু হলো?'
'না দোস্ত কিচ্ছু হচ্ছে না। তোর বিসিএসের কি খবর?
'এইতো এবারের বিসিএসটা হয়ে যাবে, দোয়া রাখিস। জানিস তো আমাদের দেশটাকে খেল এই করাপশন। তবে আশা করছি এবারেরটা হয়ে যাবে।'
তারপরে আমার কাছে এককাপ চা খেয়ে চলে যাবে। অথচ। অনিরুদ্ধ পাশ করে প্রথম বছরেই বিসিএস ক্যাডার হয়ে এখন চাঁদপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেছে। প্রতিদিন ফরমালিন ওয়ালা ফল, মাছ এইসব ধরে বেড়াচ্ছে।
কাজল আমাদের খাবার টেবিলে বসার তাগাদা দিতে থাকে। পেটে প্রচণ্ড খিদে। দ্রুত টেবিলে বসে যাই। এত খাবার পদ অথচ কোনওটাই খেতে ইচ্ছে করছে না। খাবার মুখে দেওয়ার সাথে সাথে মন ও পেট দুটোরই ইচ্ছে পরিবর্তন হয়ে গেল। বেশ খেয়ে ফেললাম। সিহাবের বাসা থেকে বের হবার আগ মুহূর্তে চমক খেলাম। কাজল একটা প্যাকেট নিয়ে এলো।
'কি এটা?'
'আপনার জন্য উপহার'
'উঁহু, আমার জন্য উপহার হলে নিতাম, কিন্তু এটা যে আগে থেকেই বাসায় ছিল তাই নিতে পারছি না কাজল।'
'এটা আগে থেকে বাসায় ছিল কে বলল? আপনি বাসায় আসার পরে ৫ মিনিটের মধ্যে অর্ডার করি। আর্জেন্ট অর্ডার কাছাকাছি হলে ওরা আধঘণ্টার মধ্যে ওরা ডেলিভারি দেয়। ওদের ডেলিভারি দিতে হয় নি, আমাদের ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে এসেছে। আমি শুধু অর্ডার করে দিয়েছিলাম'
এই মেয়ের তো দেখি সম্মোহন করে ফেলার ক্ষমতা উচ্চ পর্যায়ের। সিহাব সামনে আসে।
'তোর তো দেখি বেশ এখনও একরোখা স্বভাবটা রয়েই গেছে। শোন, তোকে যেটা বললাম। চাকরির বিষয়টা। তুই আমাকে ফোন করে জানাস। আমি কাল অফিসে গিয়ে প্রথমে তোর কাগজপত্রগুলো রেডি করবো। একটা সিভি মেইল করে দিস রাতে।'
সিহাব ওর বিজনেস কার্ড দেয়। ওখানে ওর মোবাইল নম্বর, মেইল ঠিকানা দেওয়া আছে। আমি পকেটে রাখি।
সিহাবের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কাজলকে আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। সিহাব ওর একটা গাড়ি বের করতে বলে, ওর গাড়িতে ড্রাইভার দিয়ে পৌঁছে দিতে চায়।
'আমার গাড়িতে যা। বাসে জ্যামে শেষ হয়ে যাবি।'
'না আমি এম্নিতেই যেতে পারবো'
' আরে গাধা ড্রাইভার তোকে দিয়ে আসছে সমস্যা কি?'
'সমস্যা নেই আমার বাড্ডায় একটু কাজ আছে। গাড়ি লাগবে না'।
বাড্ডায় আমার কোনও কাজ নেই। এখন থেকে যেতে হবে আমাকে আজিমপুরে। আজিমপুর থেকে বাসায় যেতে হবে। হেটে হেটে বসুন্ধরার ভেতর থেকে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসি। এই রুটে বাস অনেক কিন্তু আমি যেখানে যেতে চাই সেখানের বাস নেই। একটা সিটিং সার্ভিস সামনে দিয়ে চলে গেলো। সিটিং বাসে ওঠার ক্ষমতা নেই। পকেটের অবস্থা ভালো নয়। পনের মিনিট পর একটা ডাবল ডেকার এলে তাতেই উঠে পড়ি। বাসের জানালা দিয়ে মনে হয় পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর মনে হয় শুধু অসহ্য জ্যামটাই এই অনুভূতিটা নষ্ট করে দেয়। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। বাসে ভীড় নেই। সহজেই সিট পাওয়া গেছে না হলে এই ভরাপেট নিয়ে এতো দূর যাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে যেত।
গত দুই দিন ধরে বাসায় যাওয়া হয় নি। বাস বেশ দ্রুত গতিতেই ছুটছে। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় আইল্যান্ডে এখন রাঁধাচূড়া। সবুজ লালে কী অপূর্ব লাগে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।
বেশ রাতে বাসায় ফিরলাম। সিহাব সিভি মেইল করতে বলেছে। আমার কম্পিউটার নেই। পাশের রুমের এক ছোট ভাইয়ের কম্পিউটার আছে। যে কোনো কাজ ওর ওখান থেকে আমাকে করে নিতে হয়। কোনো চাকরির আবেদন করতে হলে ওখান থেকেই করি। আমার কোনো কাজ না থাকলেও সে নিজেই এসে জিজ্ঞেস করবে-
'ভাই, কোনো কাজ আছে নাকি, কোনো চাকরির আবেদন?'
আমি ওর কাজে হেসে দেই। ওর কম্পিউটারে আমার একটা সিভি সেইভ করা আছে। যে কোনো প্রয়োজন হলে ওকে মেইল ঠিকানা দিলেই ও পাঠিয়ে দেয়। রাত দু'টো বাজে। এইসময় ওকে ডাকা ঠিক হবে না। মোবাইল ফোনটা হাতে নেই। আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গী এই মোবাইল। মোটোরোলা ১১৮ মডেলের। মেসেজের ঘরে গিয়ে ছোট্ট একটা মেসেজ লিখি। 'দোস্ত থ্যাঙ্ক ইউ, আমার আপাতত কোনো চাকরির দরকার নেই।' মেসেজ সেন্ড হয়ে যায়। শব্দ করে ডেলিভারি রিপোর্ট আসে। তছনছ হবার হাত থেকে জীবনটা রক্ষা পেল কী?